০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিডিয়ার সামনে অশনি সংকেত সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হোন

বর্তমানে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। অবাধ-তথ্য প্রবাহের এই যুগে আজ সংবাদপত্রের জন্য
সাংবাদিকদের জন্য অশনিসংকেত। আমার চোখে কালোমেঘের ঘনঘাটা চতুরদিকে। বাংলার আকাশে-বাতাসে অসংখ্য সাংবাদিকের আহাজারি। বেড রুমেও ক্ষত-বিক্ষত সাংবাদিক দম্পতির লাশ জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এর বিচার এখনো আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু এর শেষ কোথায়?
দলবাজির সাংবাদিকতা সবকিছু গ্রাস করে নিচ্ছে lবাস্তবতাকে আড়াল করে মিডিয়ার বিকাশ সম্ভব নয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিতরে মিডিয়াকে কাজ করতে হবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য। নিজস্ব দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে মিডিয়াকে আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মোপলব্ধির জায়গাটুকু ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে হবে আগামীর চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু কী করে সম্ভব? আবার আদৌ সম্ভব হবে কিনা এমন অনেক প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জের এক কঠিনতম সময়
বিএমএসএফ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর  বলেন , আমাদের চাওয়া হলো আগামী দিনের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা হোক মানুষের জন্য। চাই সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত আগামির বাংলাদেশ।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যদি নিরাপত্তা না দেয় তাহলে সাংবাদিকরা কীভাবে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করবেন? মিডিয়ার জন্য এখন অনেক আইন। হুমকি শুধু রাজনীতিবিদদের কাছ থেকেই সব সময় পাই তা নয়, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ তো রয়েছেই।
আমি একজন ক্ষুদ্র কলাম লেখক হিসেবে মনে করি এখনকার যুগেযুগে কমে যাচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা।
কেন এ অবস্থা তৈরি হচ্ছে?মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ লিখলে মামলা হয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লিখলে তাদের মানহানি হয়।দেশের  সাংবাদিকদের সামনে দেখা দিচ্ছে এক অশনিসংকেত। করোনাকালের অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত প্রায় সব সংবাদকর্মীরা।দেশে যৌক্তিক কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। কথায় কথায় আটক করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। চলছে নানা উপায়ে হয়রানি। সব মিলিয়ে মিডিয়ার জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন সাংবাদিকরা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও করোনার আঘাত পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ও বাড়ছে। মৃতের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছেই। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও কাজ করছেন। জীবন ও জীবিকা সচল রাখার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেসব দেশবাসীকে জানাতে অনলাইন মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া অন্যতম কাজ করছে।
অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনেক সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে।ডিজিটাল আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার কাম্য নয়। সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। আবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়, যা খুশি লিখে দেব তা নয়। দুই দিকেই একটা সীমা থাকবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের যেমন বিরোধিতা করি, সেটা যার পক্ষ থেকেই আসুক না কেন। আবার সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতা ত্যাগ করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ প্রকাশ, ব্যক্তিকে আঘাত করে, সমাজে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে এমনটাও করা উচিত নয়।প্রথম দিকে সাংবাদিকতার ওপর  যেসব আঘাত এসেছিল, তার প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার জন্য কোনো সংঘবদ্ধ সাংবাদিকসমাজ তখনো গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে নির্যাতিত সাংবাদিকদের হয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।
সংবাদপত্র স্বাধীন, সাংবাদিকতার ওপর প্রকাশ্য বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু সাংবাদিকেরা রয়ে গেলেন ঝুঁকিপর্ণ ও বিপদ্সংকুল। সাংবাদিক প্রাণ হারাতে লাগলেন, নির্যাতিত হতে থাকলেন, পঙ্গু হয়ে গেলেন। এসবের বিবরণ সবার জানা, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে চায় নাl গত দুই সপ্তাহে দুইটি ঘটনা আমার কাছে খুব মর্মান্তিক মনে হচ্ছে তার মধ্যে একজন ভর্তি আছে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে সাংবাদিক শরিফুলl নির্যাতিত সাংবাদিক শরিফুল এর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে বিএমএসএফl সম্প্রতি বিএমএসএফ’র সহযোগি সংগঠন হিসেবে কেন্দ্রিয় ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি। গঠিত হচ্ছে জেলা উপজেলায় একুশ সদস্যের শাখা কমিটি।
সাংবাদিকতা পেশায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীরাও রয়েছেl কিন্তু বর্তমান যে অবস্থা তাতে করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতরা সাংবাদিকতা পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে l কারণ সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যতক্ষণ না পর্যন্ত উল্লেখ করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাংবাদিকতা পেশার মূল্যায়ন বাংলার জনগণের কাছে হবে নাl এবং সাংবাদিকদের সরকার কর্তৃক তালিকা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধান হবে না l  সারা বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যতক্ষণ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোন দাবি আদায় করা সম্ভব নয় l তাই আমি সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিশ্চিত সামনে সাংবাদিকদের অশনি সংকেত দেখা দিচ্ছে এখনো সময় আছে গ্রুপিং না করে সকল সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুনl পেশার মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন।

মো: কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক,
মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন।

জনপ্রিয় সংবাদ

মিডিয়ার সামনে অশনি সংকেত সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হোন

প্রকাশ : ০৩:৫০:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০২০

বর্তমানে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। অবাধ-তথ্য প্রবাহের এই যুগে আজ সংবাদপত্রের জন্য
সাংবাদিকদের জন্য অশনিসংকেত। আমার চোখে কালোমেঘের ঘনঘাটা চতুরদিকে। বাংলার আকাশে-বাতাসে অসংখ্য সাংবাদিকের আহাজারি। বেড রুমেও ক্ষত-বিক্ষত সাংবাদিক দম্পতির লাশ জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এর বিচার এখনো আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু এর শেষ কোথায়?
দলবাজির সাংবাদিকতা সবকিছু গ্রাস করে নিচ্ছে lবাস্তবতাকে আড়াল করে মিডিয়ার বিকাশ সম্ভব নয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিতরে মিডিয়াকে কাজ করতে হবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য। নিজস্ব দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে মিডিয়াকে আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মোপলব্ধির জায়গাটুকু ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে হবে আগামীর চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু কী করে সম্ভব? আবার আদৌ সম্ভব হবে কিনা এমন অনেক প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জের এক কঠিনতম সময়
বিএমএসএফ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর  বলেন , আমাদের চাওয়া হলো আগামী দিনের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা হোক মানুষের জন্য। চাই সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত আগামির বাংলাদেশ।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যদি নিরাপত্তা না দেয় তাহলে সাংবাদিকরা কীভাবে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করবেন? মিডিয়ার জন্য এখন অনেক আইন। হুমকি শুধু রাজনীতিবিদদের কাছ থেকেই সব সময় পাই তা নয়, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ তো রয়েছেই।
আমি একজন ক্ষুদ্র কলাম লেখক হিসেবে মনে করি এখনকার যুগেযুগে কমে যাচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা।
কেন এ অবস্থা তৈরি হচ্ছে?মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ লিখলে মামলা হয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লিখলে তাদের মানহানি হয়।দেশের  সাংবাদিকদের সামনে দেখা দিচ্ছে এক অশনিসংকেত। করোনাকালের অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত প্রায় সব সংবাদকর্মীরা।দেশে যৌক্তিক কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। কথায় কথায় আটক করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। চলছে নানা উপায়ে হয়রানি। সব মিলিয়ে মিডিয়ার জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। অসহায় হয়ে পড়েছেন সাংবাদিকরা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও করোনার আঘাত পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ও বাড়ছে। মৃতের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছেই। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও কাজ করছেন। জীবন ও জীবিকা সচল রাখার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেসব দেশবাসীকে জানাতে অনলাইন মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া অন্যতম কাজ করছে।
অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনেক সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে।ডিজিটাল আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার কাম্য নয়। সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। আবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়, যা খুশি লিখে দেব তা নয়। দুই দিকেই একটা সীমা থাকবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের যেমন বিরোধিতা করি, সেটা যার পক্ষ থেকেই আসুক না কেন। আবার সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতা ত্যাগ করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ প্রকাশ, ব্যক্তিকে আঘাত করে, সমাজে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে এমনটাও করা উচিত নয়।প্রথম দিকে সাংবাদিকতার ওপর  যেসব আঘাত এসেছিল, তার প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার জন্য কোনো সংঘবদ্ধ সাংবাদিকসমাজ তখনো গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে নির্যাতিত সাংবাদিকদের হয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।
সংবাদপত্র স্বাধীন, সাংবাদিকতার ওপর প্রকাশ্য বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু সাংবাদিকেরা রয়ে গেলেন ঝুঁকিপর্ণ ও বিপদ্সংকুল। সাংবাদিক প্রাণ হারাতে লাগলেন, নির্যাতিত হতে থাকলেন, পঙ্গু হয়ে গেলেন। এসবের বিবরণ সবার জানা, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে চায় নাl গত দুই সপ্তাহে দুইটি ঘটনা আমার কাছে খুব মর্মান্তিক মনে হচ্ছে তার মধ্যে একজন ভর্তি আছে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে সাংবাদিক শরিফুলl নির্যাতিত সাংবাদিক শরিফুল এর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে বিএমএসএফl সম্প্রতি বিএমএসএফ’র সহযোগি সংগঠন হিসেবে কেন্দ্রিয় ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি। গঠিত হচ্ছে জেলা উপজেলায় একুশ সদস্যের শাখা কমিটি।
সাংবাদিকতা পেশায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীরাও রয়েছেl কিন্তু বর্তমান যে অবস্থা তাতে করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতরা সাংবাদিকতা পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে l কারণ সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যতক্ষণ না পর্যন্ত উল্লেখ করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাংবাদিকতা পেশার মূল্যায়ন বাংলার জনগণের কাছে হবে নাl এবং সাংবাদিকদের সরকার কর্তৃক তালিকা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধান হবে না l  সারা বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যতক্ষণ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোন দাবি আদায় করা সম্ভব নয় l তাই আমি সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিশ্চিত সামনে সাংবাদিকদের অশনি সংকেত দেখা দিচ্ছে এখনো সময় আছে গ্রুপিং না করে সকল সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুনl পেশার মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন।

মো: কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক,
মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন।