ঘটনাস্থল উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড়। বুধবার সকালে সেখানকার রাজউক খালে এক অংশে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করতে গিয়ে দারুণ এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। রাজউক খাল হিসাবে পরিচিত এই খালটি মশার রাজ্য হিসাবেই পরিচিত।
খালের উপরের কচুরিপানা একটু নাড়া দেবার সাথে সাথেই লাখ লাখ-কোটি কোটি মশার উড়া উড়ি শুরু।
মশা কি আর মন্ত্রী-মেয়র চেনে? তাই মন্ত্রীর বক্তব্যের সময়ও থাকে নাজেহাল করে ছাড়ে মশককুল। মন্ত্রী যখন বক্তব্য শুরু করলেন, মেয়র আতিককে তখন গায়ে, মাথায় বসা মশা তাড়াতে দেখা যায়।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাসহ ঢাকা উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদেরও ছাড়েনি মশা। অল্প সময়েই মধ্যে সবাই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন তারা। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ফেসবুক পেজে দেয়া একটি লাইভ ভিডিওতেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় তাই উঠে আসা মশা প্রসঙ্গ। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই এডিস নিয়ে বেশি আতঙ্কিত। কারণ, এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা মারা যান। সে ক্ষেত্রে বছরের প্রথম থেকে এনিয়ে বলেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই বিষয়টি নিয়ে তিনি সতর্ক।
মন্ত্রী বলেন, এত বিস্তীর্ণ এলাকা মশা প্রজননের জন্য আছে, সেখানে সব জায়গায় তো ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। খালের মধ্যে তো মশা মারা যাচ্ছে না। আমাদের বাস্তবমুখী হতে হবে। মানুষসহ কাজ না করলে, কোথাও কোনো সরকার রাষ্ট্র সফল হতে পারে না। সিটি করপোরেশন মশা নিধনের চেষ্টা করে যাবে।
চলতি বছর ঢাকাসহ সারাদেশে ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তরায় মশা নিধনে খাল (লেক) পরিষ্কার কর্মসূচি পরিদর্শনে গিয়ে এমন কথাই জানিয়েছেন তারা। এ সময় মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন খালের মালিক ঢাকা ওয়াসা ও রাজউক, আর সেখানে মশার জন্য গালি খান তিনি।
উত্তরা খাল নিয়ে তিনি আরও বলেন, এর মালিকানা ঢাকা ওয়াসা ও রাজউকের। যখন আমি তাদের বললাম- এটি আমাকে দিয়ে দিন, ওয়াসা বলল- এ খাল তাদের নয়, রাজউকের। একটি খাল নিয়ে নিজেদের মধ্যেই এ ধরনের খেলা চলছে। কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে জনগণ। খাল তাদের, কিন্তু তারা গুছিয়ে রাখছে না।
মেয়র আতিক বলেন, কচুরিপানার কারণে খালটি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এতে আশেপাশে বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ বসবাসের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরা এলাকার মশার ঘনত্ব অন্যান্য সব এলাকা থেকে অনেক বেশি। তাই এই খালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এ খালে এখন পর্যন্ত সুয়ারেজ কানেকশন হয়নি। তারপরও মানুষ বসবাস করছে। আমরা দেখছি, যেকোনো কানেক্টিভ ওয়েতে এতে দূষিত পানি (কালো পানি) চলে আসছে। এতে বেশি পরিমাণে মশার লার্ভা তৈরি হচ্ছে, মশা হচ্ছে। খাল রাজউক-ওয়াসার, কিন্তু গালি খাচ্ছে সিটি করপোরেশন।
মেয়র বলেন, এডিস মশার জন্য যার যার ঘর, অফিস-আদালত তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমার কাছে কিন্তু অসম্ভব, কারও বাড়ির ছাদে পানি জমে আছে কি না, তা দেখা। এডিস মশার জন্য সবাইকে সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন হট স্পটগুলোয় চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মেয়র আরও বলন, গুলশান-বারিধারার মতো লেকে মশার জন্ম হচ্ছে। শুধু সিটি করপোরেশন একলার জন্য অসম্ভব ব্যাপার। সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। যে খালে আজকে কাজ করা হচ্ছে, সেটি রাজউক ও ওয়াসার খাল। অনেকবার খালটিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে দিতে বলেছি। রাজউককে বলেছি, ওয়াসাকে বলেছি, কিন্তু কেউ পরিষ্কারে এগিয়ে আসেনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, খালটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন ডিএনসিসির কর্মীরা। তবে কচুরিপানা তুলতে গিয়ে নাড়াচাড়া দিলেই অসংখ্য মশা ও ক্ষতিকর পোকা উড়তে শুরু করে। দেখে মনে হচ্ছিল, ধুলার চেয়ে যেন মশার ঘনত্ব অনেক বেশি। সেখানে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মশা ঘিরে ধরতে থাকে।
বুধবার সকালে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের দুই নম্বর সেতুসংলগ্ন এলাকায় খালের পাড়ে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজউকের আওতাধীন একটি খালের কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি। সেখানে প্রচুর মশার প্রজনন হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা।
১০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
মশক নিধন কার্যক্রম দেখতে গিয়ে মশার কামড়ে নাজেহাল মন্ত্রী-মেয়র
- নিজস্ব প্রতিবেদক | সারাবাংলাটোয়েন্টিফোরনিউজ.কম
- প্রকাশ : ১০:১৪:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪
- ৫০২ Time View
জনপ্রিয় সংবাদ